টুকরো কথা ২

ভালোবাসতে পারবেন না এখন সবকিছুকে? তুচ্ছ মানুষগুলোকে ভালোবাসুন। আপনি যখন ভালোবাসতে পারবেন, তখন বুকের ভেতরে বসন্তবাতাস অনুভব করতে পারবেন। ভালোবাসতে পারার মাঝে আছে শান্তি। কিন্তু যতক্ষণ আপনি অন্যদের প্রতি ঘৃণা করা থেকে, নিজেকে তাদের চেয়ে উচ্চমানের মানুষ মনে করা থেকে, খুঁতখুঁতানি স্বভাবে অশান্তিতে থাকা থেকে বাঁচতে না পারবেন-- আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসতে পারবেন না।


যে ভালোবাসতে পারে না, সে বেদনাক্লিষ্ট ও দুর্বল মানুষ। ভালোবাসুন, দয়া করুন। উপেক্ষা করুন নেতিবাচকতাগুলোকে। কারো খুঁত আর ভুল খুঁজতে চাইলে ভালোবাসা যায় না। মানুষ ভুলে ভরা প্রাণী, অন্যায় আর অপরাধে ডুবে থাকা প্রাণী। তাকে ভালোবাসতে পারার মূল কারণটা আপনার হৃদয়। কাউকে ভালোবাসার কৃতিত্ব কেবলই আপনার।


হৃদয়কে মুক্ত করুন সমস্ত জিঞ্জির থেকে, সমস্ত অশান্তি ও অতৃপ্তির জাল থেকে, সমস্ত ঘৃণার কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে থাকার অসহায়ত্ব থেকে। হৃদয়কে শান্তি দিন, নিজেকে ক্ষমা করুন, নিজের নেতিবাচক, ঘৃণাবাচক, অশান্তিময় চিন্তাগুলোকে উপেক্ষা করুন। চেষ্টা করুন নিজ ভালোবাসাটা চারপাশে ছড়িয়ে দেয়ার। কারণে ভালোবাসুন, অকারণে ভালোবাসুন। যখন আপনি ভালোবাসতে পারবেন-- ভালোলাগায় আপনার চোখ ভিজেও আসতে পারে! হৃদয়ে শান্তির পরশ পেতে, বুকে বসন্ত বাতাসের স্পর্শ পেতে সমস্ত ভার ফেলে দিয়ে, ঘৃণা ফেলে দিয়ে, ভালোবাসুন।


********


অনেক সময় আমরা যে জীবনধারায় চলছি সেভাবে সেভাবেই চলতে এতটাই মত্ত হয়ে থাকি যে অনেক সুন্দর সুন্দর সম্ভাবনাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করে ফেলি তা স্রেফ এই কারণে যে আমরা জানিনা সে সুযোগ দিয়ে কী করা যেতে পারে।~পাওলো কোয়েলহো


 * * * * * *

সোজা রাস্তায় দক্ষ চালক গড়ে ওঠে না। ~ পাওলো কোয়েলহো


* * * * * *

কুঠার ভুলে যায় আঘাতের কথা, গাছ তা ভোলে না। ~ পাওলো কোয়েলহো


*****

যে জিনিস আমরা বুঝিনা, তার প্রশংসা আমরা করিনা, তাকে আমরা ভালোবাসিনা। যে জিনিসের মর্ম আমরা বুঝিনা, তার প্রতি আমাদের মুগ্ধতা আসে না, আমরা আকর্ষণ অনুভব করিনা।


কোনো কিছু আমরা ভালোবাসিনা, পছন্দ করিনা তার মানে এটা কখনই না যে তা আসলে অমূল্যবান, অসুন্দর। মূলত আমাদের অনুভূতি আমাদের বোধের উপরে নির্ভরশীল।যা কিছু আমাদের বোধের সীমানায়  থাকে না, সে তো সুস্পষ্ট অনাকর্ষণীয়ই বটে!


******

ভালোবাসা পাওয়ার সূত্র জানতে চান? সেটার ক্ষেত্রে হয়ত অনেকগুলো বিষয় থাকতে পারে, আছেও। তাই সে হিসেব লম্বা কলেবরের হবে। তবে ঘৃণার সূত্র খুব সরল। আপনি ভালোবাসলেই যে বিনিময়ে ভালোবাসা পাবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে ঘৃণা করলে তার বিনিময়ে কোনোদিন ভালোবাসা পাবেন না, তা নিশ্চিত। ঘৃণার বিনিময়ে কেবল ঘৃণাই পাওয়া যায়। ঘৃণা করে ভালোবাসা, যত্ন আর উত্তম আচরণের আশা কেবল মূর্খরাই করে। মানুষ শুধু নয়, পশুপাখিরাও ভালোবাসার অনুভূতি টের পায়। মুখের শব্দ দিয়েই কেবল আবেগের আদান-প্রদান হয় তা নয়। ভালোবাসার আলাদা তরংগ আছে যা সরাসরি হৃদয়কে আলোড়িত করে। ভালোবাসা আর ঘৃণার অনুভূতি মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারে।


*********

আপনি সারাদিন যা চিন্তা করবেন, পৃথিবীটা আপনার অমন মনে হতে থাকবে। আপনি যদি বিকৃত চিন্তা করতে থাকেন, আপনি দেখবেন চারপাশে অনেক বিকৃত মানুষ। এমনকি আপনার সাথেও সবাই বিকৃত আচরণ করছে। আপনার পৃথিবীটা আপনারই প্রতিবিম্ব। যারা নোংরা, তারা নিজের নোংরামিটাই খুঁজে পায় অন্যের মাঝে। সবার মাঝের নোংরা বিষয় নিয়ে কথা বলা, অন্যদের গায়ে কালিমা লাগানো, গীবত করা, সম্মানিতদের বেইজ্জতি করতে চাওয়া মানুষগুলো মূলত অহংকারী আর বেয়াদব, শয়তান তাদের চালকের আসনে থাকে। ধ্বংস করতে বিশেষ কোন গুণ থাকা লাগে না। আপনি সৃষ্টিশীলতার চেষ্টা না করলেই আপনি প্রবল ধ্বংসকারী হয়ে যেতে পারবেন।


সৃষ্টি করা সহজ কাজ নয়। সৃষ্টি করতে হলে একটা মানুষের নিজের ভেতরে শতবার ভাংতে হয়। নিজেকে বিলিয়ে, তার জ্বালা সহ্য করে মানুষ সৃষ্টি করে যেকোনো কিছু। ভালো মানুষেরা পারে অন্য মানুষের ভেতর থেকে ভালোটুকু বের করে আনতে।ভালো মানুষ পারে অন্যদের মাঝে আলো জ্বালাতে। ঠিক এই মূহুর্তেও আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এই ভেবে যে আপনি সৃষ্টিশীল, সুন্দর চিন্তার কবেন নাকি কদর্য কুৎসিত সমালোচনাকারী হিসেবে নিজের অহংকারকে জারি রাখবেন। হৃদয়কে ভারমুক্ত করুন, নিজের নোংরা, কুৎসিত, কদাকার চিন্তাগুলোর চাষাবাদ না করে ভিন্ন কিছু করুন। কোনো ভালো কিছু করতে না পারলেও, খারাপ কিছু না করে থাকুন। খারাপ কিছু না করাও তো একটা ভালো কাজ, তাইনা?


********


জীবনটা স্বপ্নের মতন। চোখের সামনে যত অস্থিরতা, অশান্তি, উদ্বিগ্নতায় আপনি ডুবে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন-- এগুলো সবই ক্ষণস্থায়ী। জীবনের কোনো দুঃখই যেমন দীর্ঘস্থায়ী নয়, আনন্দগুলোও তেমনি। চোখটা বন্ধ করে চিন্তা করে দেখুন, ১০-১৫-২০ বছরের পুরোনো সময়গুলোকে আপনার মনে হবে অল্প ক'দিন আগের মাত্র! এর মাঝে পৃথিবী খুবই বদলেছে, আপনার জীবনটাও। কিন্তু জীবনের অনুভূতিগূলো একই রকম আছে। সেই দুশ্চিন্তা, কষ্ট-বেদনা, হাহাকার, স্বপ্ন। হয়ত বিষয়বস্তু বদলেছে, কিন্তু জীবনের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটুকুর মতই আপনার জীবন।


ভেঙ্গে পড়বেন না, খুব বেশি চিন্তায় হারিয়েও যাবেন না। জীবনটা আল্লাহর দেয়া একটা উপহার। বিশ্বাস করুন, আপনি যতই কষ্ট পেয়ে অস্থির হয়ে যান না কেন, আল্লাহ ঠিকই এই সময়ের শেষে একটা সুন্দর সমাধান রেখেছেন। আপনি যতদিনে সেই কষ্টটা সামলে উঠবেন, ততদিনে নতুন কিছু এসে হাজির হবে, হতেই হবে। এটাই দুনিয়া।জান্নাতে পা দেয়ার আগ পর্যন্ত এই উথাল-পাথাল কষ্টের মাঝে বেঁচে থাকাই জীবন। ছেড়ে দিন সব ধরণের আশা। আল্লাহ যা আপনাকে উপহার দিচ্ছেন প্রতিদিনের জীবনে, মেনে নিন। মেনে নিয়ে বর্তমানকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টাটার মাঝেই রয়েছে জীবনে সুখী থাকার এক নির্যাস।


******

আমরা কত শত ক্ষুদ্র স্মৃতি ধরে রাখি, জমিয়ে রাখি। একসময় চল ছিলো ডায়েরির পাতায় ফুল শুকিয়ে রাখা, বন্ধুদের লেখা চিঠি, স্কুল-কলেজের র‍্যাগ ডে-তে বন্ধুদের লিখে দেয়া মন্তব্য, দু'কথা। বিভিন্ন সময়ে চলে যাওয়া ঘটনার নানান পদচিহ্ন। অথচ যা যায়, চলেই যায়। খুব সুখস্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়, যখন জীবনের নতুন ধাক্কা এসে ফেলে দিতে নেয়, তখন পেছনের ঐ রোমন্থন অনুভূতি জাগাবে যে আপনার জীবনে প্রাপ্তি বলে অনেক কিছুই ছিলো, সে কারো ভালোবাসা হোক, অন্য কোন অর্জন হোক। এছাড়া অন্য স্মৃতিগুলো বরং ঝরে যেতে দেয়াই ভালো। যা চলে যায় তাদের চলে যেতে না দিলে কি আর আগামী আসতে পারবে? স্মৃতিতে নতুনকে আলিঙ্গন করার জায়গা দিতে তাই অযথা স্মৃতিদের ঝরে যেতে দিতে হয়। পেছনে ফিরে তাকালে কেউ আগাতে পারে না, ব্যক্তি মানুষও নয়, জাতিটাও নয়। ইতিহাস কেবল একটা স্পৃহা। শিক্ষা ও উপলব্ধিটুকু ছাড়া তা নিয়ে পড়ে থাকলে তা এগিয়ে যাবার বাধা। এমন বাধাগুলোকে জীবনে বেঁধে না রাখলেই কি নয়?


*****


তুমি তো অন্যের ততটুকু দেখেই একটা ধারণা করে বসো, যতটুকু দু'চোখে দেখতে পাও। আচ্ছা, কারো জীবনের কতটুকু তুমি জানতে বা বুঝতে পারো? তুমি কি জানো না, অদেখার একটা জগত আছে? সেখানে আছে জ্বিন, ফেরেশতা আর আল্লাহর আরো অজানা অজস্র সৃষ্টি। সেই জগতটা এই জগতের চেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর, মোহনীয় --তা জানো? সে জগতটার অস্তিত্ব তো এই জগতের সমান্তরালেই।


তুমি কি তোমার ক্ষুদ্রতা অনুভব করতে পারো? তুমি ভাবতে পারো তোমার বিছানার কাঠের ঘুণপোকাটাও রিযিক পেয়ে বেচে আছে, আটলান্টিকের তলে একটা শেওলাও এই মূহুর্তে রিযিক পাচ্ছে তোমার আল্লাহর। তুমি কি বুঝতে পারছ এই সূর্যের যে আলো তোমার জানালার ফুটো হয়ে ফিনকি দিয়ে আলো ছড়াচ্ছে, ততটুকু আলোও কিন্তু তোমার জন্য বরাদ্দকৃত, সেটাও নিখুঁত করে তোমার আল্লাহর আদেশ।


তুমি কি ভেবে দেখেছ তুমি কতটা ক্ষুদ্র, আবার একই সাথে কতটা অসামান্য বিশেষ ভালোবাসা তোমার জন্য তোমার রবের পক্ষ থেকে? এই অদ্ভুত ক্ষুদ্রতা সত্ত্বেও মূল্যায়িত হবার অনুভূতি নিয়েও কি অন্তরে তুমি ঘৃণা, অহংকার, পরনিন্দা, হিংসার চাষ করতে পারো?


তুমি হৃদয়টা খুলে দিয়ে ওই আকাশের মতন করে দিতে পারো না? চেষ্টা করেই দেখো না, প্লিজ?


*******

তুমি কি ভালোবাসার পথের তীর্থযাত্রী হতে চাও? প্রথম শর্ত হলো নিজেকে তোমার এতটাই বিনয়ী করতে হবে যেন তুমি স্রেফ ধুলো আর ছাই। ~ জালালুদ্দিন রুমী


* * * * *

প্রিয় হৃদয়! কখনো ভেবো না তুমি অন্যদের চেয়ে উত্তম। অপরের দুঃখগুলো সহানূভুতির সাথে শোনো। তুমি যদি শান্তি চাও, খারাপ চিন্তাগুলোকে মনের মাঝে রেখো না, পরনিন্দা কোরো না এবং এমন কিছু শেখাতে যেয়ো না যা তুমি জানো না। ~ জালালুদ্দিন রুমী


* * * * *

অর্ধেকটা জীবন হারিয়ে যায় অন্যদের খুশি করতে গিয়ে।

বাকি অর্ধেকটা হারায় অন্যদের কারণে তৈরি হওয়া দুশ্চিন্তা ও উৎকন্ঠায়।

এই খেলা ছাড়ো, যথেষ্ট খেলেছো তুমি।

~ জালালুদ্দিন রুমী


*****''

যেদিন থেকে আপনি বর্তমানে বেঁচে থাকতে শিখবেন, সেদিন থেকে আপনি সুখে থাকতে পারবেন। অতীত-ভবিষ্যতের নিরর্থক বোঝা মাথায় নিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না।



*****

মানুষ ভালোবাসা পেতে চাওয়ার কাঙ্গাল যতটুকু, সম্ভবত তার চেয়ে অনেক বেশিই কাঙ্গাল ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। হয়ত অনেক ক্ষেত্রে পেতে চাওয়ার কাঙ্গালপনাটাই বেশি প্রকাশ হয় বলে অমন ধারণাই বেশি প্রচলিত। অথচ মানুষ হরদম এই ভীড়ের মাঝে এমন মানুষদেরকেই খুঁজে বেড়ায়, যাদের ভালোবাসা যায়। সেটাই খুঁজে পায়না। হয়রান হয়ে থাকে হৃদয়গুলো। আসলে, যারা মানুষকে কম বিচার করে, বেশি দয়া করে, সহজে মিশতে পারে, অতিরিক্ত চিন্তা না করে অন্যের উপকার করতে পারে --তারা সহজে ভালোবাসতে পারে, তারা সহজে শান্তি পেতে পারে। সুখী হবার সূত্রটা আসলে খুবই সহজ, কিন্তু নির্বোধদের কাছে তা খুবই কঠিন।


*****

সব ধ্বংসই কি আর ধ্বংস বয়ে আনে? ধ্বংসের মাঝে অনেকেই খুঁজে পান নতুন সৃষ্টির প্রেরণা। সকল অন্ধকারই কি আশার শেষ? যারা জানেন আঁধার কেটে যায়, যারা জানে আঁধারের অর্থ, তারা নতুন সূর্যালোকের প্রত্যয় ধারণ করেন বুকে। শয়তান যখন আদমকে (আলাইহিস সালাম) জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসতে দেখেছিলো, ভেবেছিলো হয়ত সে তার অপকর্ম সেরে ফেলতে পেরেছে। কিন্তু শয়তান হয়ত বুঝেনি যে ডুবুরি সমুদ্রে ডুব দিয়ে মণি-মুক্তা আহরণ করে আনে। জীবনের কষ্টগুলোতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়তে নেই। প্রতিটি কষ্টের মাঝে নতুন আনন্দের বার্তা আছে, প্রতিটি যন্ত্রণায় খুঁজে পাবেন স্বস্তির বাতাস। শুধু নিজের মতন করে জীবনকে চাইলে হবে? বরং যিনি জীবন দিয়েছেন, তার পরিকল্পনায় আস্থা রাখুন। তিনি যা পাঠাবেন, তার মাঝেই আছে ভালোবাসার চিহ্ন। জীবনে পাওয়া উপহারের ডালা খুলে দেখুন, খুঁজে পাবেন নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্বপ্ন, নতুন অনুপ্রেরণার বার্তা।



*****

একজন দক্ষ মানুষ এবং নবিশ ব্যক্তির মাঝে পার্থক্য কি জানেন? নবিশ যতবার একটা কাজের জন্য চেষ্টা করেছে, দক্ষ ব্যক্তিটি তার চেয়েও অনেক বেশিবার কাজটিতে ব্যর্থ হয়েছেন।


*****


ব সুন্দর একটা ভবিষ্যত গড়ে নিতে সুন্দর অতীত থাকা বাধ্যতামূলক নয়। নিজেকে সুযোগ দিন। আপনার হাতে সময় আছে, বর্তমানকে কাজে লাগান। পেছনের দিকে না তাকিয়ে নিজের সেরাটুকু ব্যবহার করুন বর্তমানের মাঝে...



******

সকল ক্ষতিই মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারে। মানুষ পরম অভিযোজন ক্ষমতার একটি প্রাণী। যাকে ছাড়া/যা ছাড়া জীবন কল্পনাও করতে পারেননি, তার বিদায়ের পরে আপনি দিব্যি খাবেন, ঘুমাবেন, হাসবেন। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ নয়, গ্লানি হয়। এমনকি আনন্দের সময়ও নয়। দুনিয়া নিজেই অস্থায়ী। এর ভেতরের প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণা অস্থায়ী, নশ্বর। এমন কিছুর প্রতি কীসের এত আকাঙ্ক্ষা, এত স্বপ্ন আর কল্পনা-জল্পনা আমাদের যা কিছু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে যাবে?



******

আপনি হয়ত অনেক ভালো কাজ করতে চান। গাছে পানি দেয়াও তেমন। সেই চিন্তা থেকে একটা গাছে পানি দিলেন নিয়মিত। পরে দেখলেন গাছটা ক্যাকটাস, সেটার পানির দরকারই নেই ওভাবে। তাতে কি আপনার ক্ষতি হলো? নাহ! এটাও শিক্ষা হলো, জীবনের এক নিগূঢ় জ্ঞানার্জন হোলো। এমন হাজারো অনাকাংখিত শিক্ষার সমন্বয়ই আমাদের জীবন।


******

সব সমস্যার বেশি সরলীকরণ করলে সমস্যা। জটিল সমস্যার সরল সমাধান চাইতে গেলে সব হারাতে হয়। একই বুঝ দিয়ে সবাইকে বুঝতে গেলেও বিপদ।


******

শেষ কবে আপনি রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখেছেন? আমরা যাদের জ্বলতে দেখি টিমটিম আলোয়, সেই মূহুর্তের সেই আলোটাও তো কত শত বছর আগে ওখান থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছিলো তা হিসেব করার বিষয়, কিন্তু অমন নক্ষত্র, গ্রহ তো ওই আকাশে, এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে লাখে লাখে। ওদের একেকটার আকার আমাদের এই পৃথিবীর চেয়েও অনেক বড়। ওদের ওখান থেকেও আমরা একটা বিন্দুর মতই। এই বিন্দুতেই আমাদের সব। এই বিন্দুটুকুর আরো বিন্দু অংশ নিয়ে হাজার হাজার সৈনিক যুদ্ধ করেছে, সেনাপতিরা নিজেদের অমিত শক্তিশালী মনে করেছে হয়ত কোন একটা অংশ বিজয় করে। শাসকেরা নিজেদের ভাষ্কর্য উদ্বোধন করে, অফিসে অফিসে নিজের ছবি ঝোলায়; মনে করে তাদের এই শক্তি আর এই সময় হয়ত রয়ে যাবে। মহাবিশ্বের এইটুকু বিন্দুতেই শত-সহস্র ধর্ম রয়েছে যারা সবাই নিজেকে সঠিক মনে করে। এটুকুতেই রয়েছে অনিন্দ্য সুরের ঝংকার তৈরি করা লক্ষ লক্ষ সংগীতজ্ঞ, গভীর জীবনবোধ নিয়ে কবিতা ও গল্প লেখা হাজার-লক্ষ কবি আর ঔপন্যাসিক এসে চলেও গেছে। এটুকুর মাঝেই কত আঁকিয়ে যে এঁকেছেন ছবি, শিল্পে আর সংস্কৃতির চর্চার গভীরমূলে গিয়েছেন কত শত জন! এটুকুতেই রয়েছে কত প্রেমিক, কত প্রেমিকা। কত ভালোবাসা, কত টান আর কত আবেগ! কত অশ্রু আর কত হাসি। এখানেই রয়েছে হিংসা-বিদ্বেষ, কেউ কিছু পেলে অপরের জ্বালা ধরা মন্তব্য নির্নিমেষ। এটুকু জায়গায় কত মানুষের কত মত, কত ক্রোধ, কত অহং, কত ঘৃণা। অথচ এই সুবিশাল আয়োজন, এই অন্ধ ক্রোধান্ধ, আমিত্বকে জয় করার নিরুদ্দেশ যাত্রাপথে কারো কি তার ক্ষুদ্রতা নিয়ে আদৌ অনুভব হয়? এই টুকুন সৃষ্টির মাঝে, এই বিন্দুর মাঝে এত সিন্ধু যিনি স্থাপন করেছেন, তার বিশাল সৃস্টির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থেকে হয়ত আনমনেই অনুভব হবার কথা ছিলো, "হে আমাদের স্রষ্টা, আমাদের মালিক! আমাদের দয়া করুন। আমাদের চিন্তার আর হৃদয়ের সীমাবদ্ধতা ও ক্ষুদ্রতাকে সহ্য করতে না পারার এই জ্বালা থেকে মুক্তি দিন আপনার দয়া আর মহত্বের স্পর্শে।"


******

জীবনটার দৈর্ঘ্য খুবই কম। কেবল একটু পেছনে তাকিয়ে দেখবেন, মনে হবে যেন ৫ বছর আগের ঘটনাটা মাত্র অল্প ক'দিন আগের! আমাদের চারপাশে অনেক খারাপ মানুষ, প্রায়ই অনেক খারাপ ঘটনা ঘটে। আমরা যদি সেসবে আটকে যাই, শংকা-চিন্তা-হতাশা-দুঃখে পড়ে আমরা তখন আমাদের সত্যিকারের লক্ষ্যে পৌঁছতে আমরা বাধাগ্রস্ত হবো। ভালো চিন্তা, হৃদয়জোড়া ভালোবাসা, উচ্ছ্বাসভরা বুকে মানুষকে হাসিমুখ করে দেয়ার মতন কাজের বিকল্প নেই।


জীবনটা খুব ছোট। যে কোন ধরণের ক্ষুদ্র/খারাপ/মন্দ চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা/শংকার মাঝে ডুবে থাকার মাঝে কোন ন্যুনতম কল্যাণ নেই। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে, কষ্টের মাত্রা, খারাপ লাগার মাত্রা যেমনই হোক না কেন। কাজের মাঝে বেঁচে থাকতে হবে-- কল্যাণকর কাজ, ভালো কাজ, আনন্দময় কাজ।



******

ভালো ছাত্রত্বই কখনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিশ্চয়তা দেয় না। অনেক স্কুল জীবনের 'ফার্স্ট বয়/ফার্স্ট গার্ল' নানান কারণে 'ভালো কোথাও' ভর্তি হতে পারে না। ভালো রেজাল্টও ভালো চাকুরির নিশ্চয়তা দেয় না। অনেক অনার্স সিজিপিএ পাওয়া ছেলেমেয়ের চেয়ে সময়মত পাশ করে বের হতে না পারা ছেলেরা অনেক অর্থ উপার্জন করেছে/করছে এমন উদাহরণ আছে ভুরি ভুরি। সৎ থাকলেও যে আপনার গায়ে অসততার কালিমা আসবে না তা বলা যায় না, অনেক সৎ মানুষকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে এমন গল্পও আমাদের অনেকের আত্মীয়দের জীবনেই আছে। চরিত্র সুন্দর হলেও যে অপবাদ আসবে না, সেটাও বলা যায় না। অপবাদ দেয়ার কাজ যারা করতে ভালোবাসে তারা তো আল্লাহর প্রিয়তম বান্দাদেরকেও ছাড়েনি।


পরিশ্রম করলেই উত্তম ফল হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে পরিশ্রম না করলে উত্তম ফল অসম্ভব। আর হ্যাঁ, সবার পরিশ্রম একই রকম হয় না। একেকটা মানুষের জীবনের ঝড় একেকটা সময়ে আসে তীব্র হয়ে। সবার জীবন আলাদা, জীবনে পাওয়া রহমত আলাদা, জীবনের পদ্ধতি আর গড়ে ওঠা আলাদা, শক্তি আর দুর্বলতাও আলাদা। আল্লাহই সুনিপুণভাবে সবকিছু জানেন। কেবলমাত্র তার হাতেই সমস্ত ক্ষমতা। সমস্ত কিছু দেয়ার মালিকও তিনিই। তাই, কাজ করতে হবে সর্বাত্মক চেষ্টার সাথে, কিন্তু মনে রাখতে হবে ফলাফল একান্তই আল্লাহর দান। সমস্ত প্রার্থনা আর অন্তরের নিগূঢ় কথপোকথন কেবলই আল্লাহর সাথে হতে হবে।


******

No comments:

Post a Comment

২৩-০৪-২০২০

আকাশ কালো মেঘ করে, শোঁ-শোঁ দমকা হাওয়া বইয়ে ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির অনুভূতিটা একটা খুব আনন্দের অনুভূতি। এসময়ে রাস্তায় আটকে গিয়ে বিরক্ত লা...