টুকরো কথা ১

বিদায় তো তারই সুন্দর হয়, যার অবস্থান থাকে অর্থপূর্ণ। সুন্দর বিদায় মানে কি আর আড়ম্বর, জাঁকজমক, ঢাকঢোল? সুন্দর বিদায় হলো যতটুকু থাকা হলো, ততটুকুতে নিজ জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া, রবের স্মরণ, ভালোবাসার মানুষদের অশ্রু। চাইলেই কি আর যাবার আয়োজন সুন্দর করতে পারে সবাই? সে তো তারই হয়, যার কাজ হয় সুন্দর।


*********

তবু পৃথিবীতে ভালোবাসা রয়ে যাবে।

হয়ত কেউ জীবনের যন্ত্রণায়, রোগের দংশনে বিদায় নেবে জগতসংসার ছেড়ে রবের কাছে, কেউ তারে বিদায় দিয়ে পড়ে থাকবে আমৃত্যু যুদ্ধে। এই কষ্টকর বৃত্তে তবু ভালোবাসা জয়ী হয়। রক্ত-জ্বালা-যন্ত্রণা-শংকা পেরিয়ে মানব হৃদয় প্রেমে ডুবে।


ভালোবাসুন পৃথিবীবাসীকে। দয়াময় আল্লাহ আপনায় ভালোবাসবেন। এ জগত পেরিয়ে অনন্ত জগতে পাবেন আনন্দভরা অভ্যর্থনা! ভালোবাসা-দয়া বৃথা যায় না...



*********

কাউকে উপদেশ দিতে হলে সেটা হবে ভালোবেসে। যাকে চিনিনা, এমন কাউকে অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত উপদেশ দেয়াও উচিত নয়; তা করতে হয় প্রজ্ঞার সাথে। তবে যাদের আমরা চিনি, জানি, ভালোবাসি, তাদের যদি আমরা দেখি বিষণ্ন, দুঃখে জর্জরিত, তখন সচেতনভাবেই পাশে থাকা উচিত। তাকে এমন কথা বলা উচিত নয় যাতে সে আহত হয়। বরং বুদ্ধিমত্তার সাথে, ভালোবেসেই কথা বলতে হবে যে জিনিসটায় তার উপকার হয়। মানুষ অনেক সময় উপদেশ ছাড়াই কাছের মানুষদের সান্নিধ্যে পেলেই সঠিক বুঝ পেয়ে যায়, অনেক সময় তাদের হয়ত বকা দিতে হয়। এই ব্যালান্সটা তখনই সম্ভব, যখন আমরা ওই মানুষটাকে জানবো ও ভালোবাসবো।


তবে কেউ যখন ডিপ্রেসড থাকে, তার অবস্থা আসলে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না বলেই সে ডিপ্রেশনে ভুগে। সচেতনভাবেই তাদের পাশে থাকতে হবে, উপদেশও খেয়াল করে দেয়া উচিত। অন্তত এমন কথা বলা উচিত নয় যা হয়ত তাকে আরো আহত করবে।


*********

আপনার চোখগুলো যা দেখতে চায়, আপনি তো কেবল সেটাই দেখতে পান।


মূল দেখার বস্তুগুলো আমাদের কন্ট্রোলের বাইরে, আল্লাহ যা চান, সেটাই হয়। তাই, ঘটনাগুলো দেখতেই হয়। কিন্তু ঘটনা তো প্রতি মূহুর্তেই আমাদেরই চারপাশে অজস্র। ফ্যান ঘুরলে কাপড় নড়ে, বাইরে পাখি ডাকে, কেউ কাউকে কিছু বলতেসে, এমন হাজারো ঘটনা। এগুলোর মাঝে আমরা যেটা চাই, সেটাই কেবল খেয়াল করি। আর যা খেয়াল করি, তাকে নিজেদের ইচ্ছেমতন ব্যাখ্যা করি। রাস্তায় কেউ কাউকে থাপ্পড় দিলো-- এই দৃশ্য দেখে আপনি ভাবতে পারবেন এটা অন্যায়, ভাবতে পারবেন দুর্বলদের উপরে সবলের অত্যাচার, ভাবতে পারবেন এটা বড় ভাই ছোট ভাইকে শাসন করেছে। ঘটনা যাই হোক, যে অনুভূতি আপনি পেতে চান, আপনি নিজেকে সেটাই বিশ্বাস করান, ঘটনা তখন তেমনটিই মনে হয়।


*********

লোকে আপনাকে অশান্তিতে রাখে না। লোকে আপনাকে যন্ত্রণা দেয় না। আপনি বরং নিজের দিকে তাকান, নিজের গভীরে, হৃদয়ে, আপনার সত্ত্বার গভীরে। আপনি যে ঘটনাতে ত্যক্ত-বিরক্ত, সেই ঘটনাতেই দিব্যি আরেকজন হাসিমুখে কাটাচ্ছে জীবন। কষ্ট-যন্ত্রণা ঘটনার মাঝে নয়, বরং ঘটনাকে আপনি কীভাবে গ্রহণ করেন, তার মাঝে। তাই সহজভাবে গ্রহণ করুন জীবন। সুখে থাকার ভিন্ন কোনো উপায় নেই।


*********

একটু ধৈর্য ধরুন, শান্ত হোন।প্রথম প্রথম অনেক কিছুই কঠিন থাকে, পরে সেগুলো সহজ হয়ে যায়।\


*********

জীবনে পেছনের ঘটনাগুলোকে আপনি যেভাবে ব্যাখ্যা করবেন, আলাপে আনবেন, অনুভব করবেন-- সেগুলো সেভাবেই আপনাকে শক্তি দিবে অথবা ধ্বংস করবে। জীবনের ঘটনাকে আপনি যেভাবে নিবেন, জীবনের প্রভাব আপনার প্রতি অমনই হয়। ঘটনা যা-ই হোক।


*********

চারপাশের পরিবেশে খুব অশান্তি লাগে? মানুষগুলো কি জীবনটাকে দুর্বিসহ করে তুলছে? জ্বী, এরকমটা প্রায় সমস্ত মানুষের জীবনেই হয়। ইচ্ছে করবে অন্যায়কারী, অত্যাচারী, মিথ্যুক, নির্মম মানুষগুলোর বেড়াজাল থেকে পালাতে। কিন্তু হয়ত বেশিরভাগ মানুষই পারে না। আপনি মানুষগুলোকে বদলাতেও পারবেন না। আপনি শুধু পারবেন আপনাকে বদলাতে। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের বদলাতে পারি। আপনি আপনাকে পরিবর্তন করুন। আপনার নিজেকে বদলে দিন। আপনার শান্তিটুকু আপনার নিজের মাঝে, সেটুকু নিয়ে থাকুন। পৃথিবীতে ভালো থাকার এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।


*********

আপনার জীবনটা হলো আপনার পছন্দগুলোর ফলে বেছে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর সমষ্টি। আপনার যদি জীবনটাকে এখন সহ্য না হয়, বুঝে নিন আপনি এমন কিছু নিয়ে পড়ে আছেন যা আপনার ভুল পছন্দ। শীঘ্রই নিজের জন্য বেছে নিন ভালো কিছু।


*********

শব্দ দিয়ে অনেক কিছুকে গড়ে দেয়া যায়, আবার ধ্বংস করে দেয়া যায় অনেক কিছু, শব্দ ব্যবহারের আগে তাই খেয়াল করা উচিত।


*********

সংকীর্ণতার জিঞ্জির ভেঙ্গে মুক্তি পেতে চাইলে ভালোবাসতে শিখতে হবে, অসংকোচ ভালোবাসা।


*********

যখন সবকিছু অসহ্য লাগছে, তখনো কিন্তু দেখবেন আপনার অনেককিছু আরেকজনের লাইফে কমন হলেও সে অন্যরকম আছে। আসলে, সমস্যা বেশিরভাগটাই আমাদের নিজেদের মাঝেই। নিজেকে ভালো রাখুন।


*********

ভালো থাকা একটা অভ্যাস। খারাপ থাকাও। মন খারাপটাও অভ্যাস। দক্ষতাও অভ্যাসের ফসল। তাই, নিজের অভ্যাস নিজে গড়ুন, যেমন ইচ্ছে হয়, তেমনটাই থাকুন!


*********

যিনি দিতে শিখেননি, তিনি আসলে পেতেও শেখেননি। দেয়ার আনন্দ তো পাওয়ার আনন্দের চেয়ে আকাশ সমান বড়।


*********

শুধু এই জন্যেই কি আরেকজনকে ঘৃণা করছেন যে তার পাপগুলো সে আপনার চেয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে করে?


*********

আপনি কেবল চেষ্টা করতে পারেন। ফলাফল ঘটানোর শক্তি-ক্ষমতা আপনার নেই, তা ঘটাতে আপনি পারবেন না। ফলাফলের চিন্তা বাদ দিন।


*********

গ্রহণ করে নিন জীবনে যা কিছু আসে, আসবে। হাসিমুখ থাকুন, চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে দুশ্চিন্তা ও আশংকা করে নিজেকে নষ্ট করবেন না।


*********

কখনো কখনো শব্দেরা আমাদের বুকের কথাগুলোকে প্রকাশের জন্য একদমই তুচ্ছ হয়ে যায়। তখন হৃদয়ের আর্তি আর কাঁপুনিগুলো এমন এক ভাষায় তরঙ্গায়িত হয় যা কেবল তিনিই শুনতে পান।


*********

আজকের খুব তীব্র কষ্টের অনুভূতিটা আর কয়েক মাস পরে আরে এমন তীব্র লাগবে না, দেখবেন দিব্যি এটা মনে করে হাসছেন আর ভাবছেন 'আহা সময়টা কেমন করেই না পার করেছি!'... জীবনটা এমনই।


*********

"মন ভালো নেই"-- এই কথা আওড়ায় যিনি, তার আপাতত মন ভালো হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে যদি সত্যিই মন ভালো করতে চান।


*********

এই তীব্র রোদে যখন 'গ্রীষ্মকালের' উপরে রাগ হয়, তখন একটু সচেতন মানুষ ঠিক অনুভব করতে পারেন যে অনেক ঠান্ডার দেশে মানুষ রোদের জন্য কতটা লালায়িত থাকে।   আপনার জন্য অনাকাংখিত বস্তুটি হয়ত কারো প্রবল প্রার্থনার চাওয়াও হতে পারে। ক্ষুব্ধ হবার আগে ভেবে দেখুন একটু! :)


*********

যে কাজ আপনার আত্মাকে আনন্দিত করে, সে কাজগুলো করুন। দেখবেন আপনি বদলে যেতে থাকবেন।


*********

জীবনের ভুল আর কষ্টগুলো অর্থহীন নয়। সেগুলো থেকে পাওয়া শিক্ষাই তো আমাদের সামনে আরো এগিয়ে যাওয়ার শক্তি যোগায়।


*********

আপনার চোখগুলো যা দেখতে চায়, আপনি তো কেবল সেটাই দেখতে পান।


*********

কোনো ভালো কাজ করতে ইচ্ছে হলে সাথে সাথে করে ফেলুন। সংশয় করবেন না। শেষে হয়ত কাজটা করা হবেনা।


*********

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কী হবে? বরং সে যা করে, আপনিও তাই করুন। লক্ষ্যপানে ছুটতে থাকুন একটানা।


*********

আপনি যখন কিছু পান, তখন কিছু জিনিস থাকে যা হারান। আপনি যখন কিছু হারান, তখন কিছু জিনিস পেয়ে থাকেন। এই ভারসাম্যই জীবন। জীবনটাকে অন্যভাবেও দেখা যায়, অনুভব করা যায়।


*********

প্রবঞ্চিত হওয়া ভালো। উপেক্ষিত হওয়াও। নইলে কেমন করে বুঝবেন ভালোবাসা পাওয়া আর মূল্যায়িত হবার আনন্দ ও মর্যাদা?
*********

আপনি যখন কিছু পান, তখন কিছু জিনিস থাকে যা হারান। আপনি যখন কিছু হারান, তখন কিছু জিনিস পেয়ে থাকেন। এই ভারসাম্যই জীবন। জীবনটাকে অন্যভাবেও দেখা যায়, অনুভব করা যায়।*********

বেশি ভালো কখনই ভালো না। স্বর্ণের মধ্যে ইচ্ছে করেই খাদ মেশানো হয় যেন তা টিকে থাকে। মানুষও বেশি ভালো দেখতে পেলে বুঝতে হবে তা ভঙ্গুর-- হয়ত তার খাদ দেখা যাচ্ছে না, অথবা সে আপাতত এই অবস্থায় আছে, খুব শীঘ্রই ভেঙ্গে যাবে। ভুলত্রুটি মেশানো, অতি পারফেক্ট না হওয়া মানুষগুলোই শক্তপোক্ত, বাস্তব। অবাস্তব ও কল্পনাতে তো কত কিছুই হয়, জাগতিক পৃথিবীতে সেগুলোর অস্তিত্ব রয় না।
*********

আজকের দিনটি সুন্দর। এটা বর্তমান। আজ আমরা যদি হাল না ছেড়ে একে জীবনের সেরা দিন হিসেবে তৈরি করতে চেষ্টা করি, তা হবে বিশাল প্রাপ্তি। হাল ছাড়বেন না।

*********

"আমি তো চারপাশে মানুষদের প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা বিলিয়ে দেবারই যথেষ্ট সময় পাইনা, লোকে কেমন করে এত রাগ-ক্রোধ-ঘৃণা করার সময় পায় সেটাও তো বুঝেই পাইনা!"

*********

কারো প্রতি রাগ প্রকাশ না করে রাগের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বললে ঝগড়ার পরিবর্তে হয়ত সমাধান পাবেন।

*********

কোথাও গিয়ে উপস্থিত সবার চেয়ে নিজেকে উত্তম অথবা বড় মনে করাটা কিন্তু আত্মবিশ্বাস না, বরং নিজেকে কারো সাথে তুলনা করতে না যাওয়াই হলো আত্মবিশ্বাস।


হাল ছেড়ো না বন্ধু। এই হাল না ছাড়াই তো জীবন। এই জীবন সমদ্রের পুরোটাই তো উত্তাল ঢেউ। হাল ছাড়ার কিছু নেই, দিগন্ত দেখারও কিছু নেই। যারা মনে করে হাল ঠিকই আছে, ধরে ফেলেছি-- তারাই ডুবন্ত। তাই ধরে থাকো হাল। লেগে থাকো।

*********

আমরা জীবনে যা করি, যা অর্জন করি, যা অভুতপূর্ব জিনিস শিখি-- সব আমাদের মাঝেই ছিলো, থাকে। সময়ে সময়ে আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু সেই উপলব্ধি করতে একটা 'জার্নির' মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পাওলো কোয়েলহো আলকেমিস্টে এই ব্যাপারটা বুঝিয়েছে। একটা অভিজ্ঞতার আগে-পরের আমরা একই মানুষ না। একই জিনিস আমাদের ভিন্নভাবে ধরা দেয়, দেখার চোখ বদলায়। অভিজ্ঞতা খুব খেলো কিছু না। তাই, যত তিক্ত হোক, অভিজ্ঞতার তুলনা হয় না। নিজের ভেতরেই যা ছিলো, তাকেই নতুন করে খুঁজে পেতেই আমরা ছুটে বেড়াই পৃথিবীর এই প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে।

সময়ের সাথে সাথে পৃথিবী যতটা বদলায়, দেখার চোখটা তার চেয়ে অনেক বেশিই বদলায়...

*********

আপনার কি মনে পড়ে শেষবার যখন মনে হয়েছিলো এই কষ্ট আর আপনি সহ্য করতে পারবেন না! আপনি পেরেছেন, এখনো পারবেন, আগামীতেও পারবেন। তাই অধৈর্য হয়েন না, আশাহত হবেন না।

মানুষ বদলায়, খুব বদলায়। সময়ের সাথে সাথে বদলায় রুচি, দেখার চোখ, অনুভবের হৃদয়। পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নেয়াই নয়, তাকে অভিনন্দিত করতে না পারলে আমরা পরাজিত হবো। মন্থর থাকা স্রষ্টার সৃষ্টির কোথাও নেই। গাছের পাতা বদলায়, রং বদলায় আকাশের, ভালোলাগা-মন্দলাগা বদলায় মানুষের হৃদয়ের, বদলে যায় নদীর গতিপথ, ছায়াপথ, নীহারিকা, নক্ষত্রালোক, মায়াবী রাতের ক্ষণগুলোও... থেমে থাকেনা আমাদের আয়ু, জীবনকাল। তাই ভাংগা গড়ার এই জীবনের পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নেয়াতেই উপায়...

*********

একজন জ্ঞানী মানুষের কাছে এসে এক ব্যক্তি বলেছিলো,

- আমি তো খুব ক্ষুদ্র, আমি যতই আন্তরিক চেষ্টা করি না কেন, আমি কি আদৌ কোনো পরিবর্তন করতে পারবো কিছু?


জ্ঞানী মানুষটি বলেছিলেন,

- ক্ষুদ্র কিছুর শক্তি নেই বলছো? তাহলে অন্ধকার রাতে মশার সাথে কাটিয়ো, বুঝবে ক্ষুদ্র হলেও ডেডিকেটেড থাকলে কেউ কতটা শক্তিশালী!

No comments:

Post a Comment

২৩-০৪-২০২০

আকাশ কালো মেঘ করে, শোঁ-শোঁ দমকা হাওয়া বইয়ে ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির অনুভূতিটা একটা খুব আনন্দের অনুভূতি। এসময়ে রাস্তায় আটকে গিয়ে বিরক্ত লা...